সর্বশেষ সংবাদ
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়লো পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। গতকাল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডে এবং ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের দারুণ শতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রানের পাহাড়ে চড়ে অজিরা। জবাবে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে ২১ ওভারে মাত্র ৯০ রানে গুটিয়ে যায় ডাচরা। ফলে ৩০৯ রানের জয় পায় অজিরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এর আগে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটি ছিল ২৭৫ রানের। সেই রেকর্ডটিও করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ আসরে পার্থে আফগানিস্তানকে এত বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল তারা।
চলমান বিশ্বকাপে অজিদের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে অনেকটাই ব্যাকফুটে ছিল তারা। সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা তিন ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট পেয়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে জায়গা করে নিয়ে সেমিফাইনালে পথে ভালোভাবেই টিকে থাকলো অস্ট্রেলিয়া। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কাল টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় অজিরা। ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ দলের ব্যাটিং উদ্বোধনে এসে ২৩ বলে গড়েন ২৮ রানের জুটি। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি মার্শ। চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ২৮ রানেই ফিরতে হয় তাকে। ১৫ বল খেলে ২ চারের মারে ৯ রান তোলার পর ফন বিকের শিকারে পরিণত হন মার্শ। তবে মার্শ আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে থিতু হয়ে যান ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ। ১১৮ বলে ১৩২ রানের ঝাড়ো জুটি গড়েন তারা। এই জুটি বিচ্ছিন্ন হয় ২৩.৩ ওভারে। দলীয় ১৬০ রানে আরিয়ান দত্তের বলে ভ্যান ডের মারউইয়ের ক্যাচে পরিণত হন স্মিথ। ফেরার আগে ৬৮ বলে ৭১ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ৯ চার ও ১টি ছয়ের মার ছিল। এরপর মার্নাস লাবুশেনকে নিয়ে ৭৬ বলে ৮৪ রান যোগ করেন ওয়ার্নার। লাবুশেন ৪৭ বলে ৭ চার আর ২ ছক্কায় ৬২ রান করে আউট হন দলীয় ২৪৪ রানে। ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে তাকে ফেরান ডি লিড। হাফসেঞ্চুরির পর লাবুশেন বেশি দূর যেতে না পারলেও ঠিকই টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন ওয়ার্নার। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৮৫ বলে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত করেছিলেন ১২৪ বলে ঝড়ো ১৬৩ রান। আর এবার ডাচদের বিপক্ষে ওয়ার্নার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯১ বলে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি তার ২২তম শতক আর বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে ষষ্ঠ। বেস ডি লিডের করা ইনিংসের ৩৯তম ওভারে ওয়ার্নার সেঞ্চুরি করার পরপরই জশ ইংলিশ আউট হয়ে যান ১২ বলে ১৪ রান করে। সেঞ্চুরি পর ফন বিকের করা পরের ওভারে ওয়ার্নারও আউট হয়ে যান। ফেরার আগে ৯৩ বলে ১১ চার ও তিন ছক্কার মারে করেন ১০৪ রান। ওয়ার্নার আউট হলে অস্ট্রেলিয়া ২৬৭ রানে হারায় ৫ উইকেট। ৪৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২৯০ রানে ক্যামেরন গ্রিন রান আউট হন। ফেরার আগে ১১ বলে এক বাউন্ডারিতে করেন ৮ রান। এরপরই বিধ্বংসী রূপে ব্যাট চালিয়ে রেকর্ড সেঞ্চুরি হাঁকান ম্যাক্সওয়েল। মাত্র ৪০ বলে শতক পূর্ণ করেন অজি এই অলরাউন্ডার। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ম্যাক্সওয়েল আউট হন শেষ ওভারের তৃতীয় বলে। দলীয় ৩৯৩ রানে ফন বিকের বলে অ্যাঙ্গেল ব্রেখটকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৪৪ বলে ১০৬ রান করেন তিনি। তার দানবীয় ইনিংসে ছিল ৯ চার আর ৮টি ছক্কার মার। পরের বলেই মিচেল স্টার্ক ফেরেন শূন্য রানে। তবে শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ৯ বলে দুই বাউন্ডারিতে ১২ রানে এবং অ্যাডাম জাম্পা ১ বল খেলে ১ রানে অপরাজিত থাকলে চারশ’র এক রান আগে থামে অজি ইনিংস। নেদারল্যান্ডসের লগান ফন বিক ১০ ওভার বল করে ৭৪ রানে নেন ৪টি উইকেট। বেস ডি লিড ১০ ওভারে ১১৫ রানে পান ২ উইকেট। শুধু বিশ্বকাপেই নয়, ওয়ানডের ইতিহাসে বেস ডি লিডের বোলিং ফিগারটাই সবচেয়ে খরচে।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে অ্যাডাম জাম্পার ঘূর্ণিতে মাত্র ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে ডাচরা। ধীরে ধীরে ধংসস্তুপে পতিত হয় তারা। সেখান থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। ৪০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জেতা প্রায় অসম্ভব। ব্যাটিংয়ে যার প্রমাণও দিয়েছেন ডাচ ব্যাটাররা। অজি বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি তারা। ফলে একশ’র আগে গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে ২৫ বল খেলে ৬ চারের মারে সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন ওপেনার বিক্রমজিৎ সিং। বাকিরা কেউ বিশের ঘরও ছুঁতে পারেননি। ১৮ বলে ২ চারের মারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন তেজা নিদামানুরু। ১২ রান (২২ বল) করে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। অস্ট্রেলিয়ান লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ৩ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে একাই নেন ৪টি উইকেট। ১৯ রানে ২ উইকেট শিকার করেন মিচেল মার্শ। ম্যাচসেরা হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।