সর্বশেষ সংবাদ
স্বপ্নের শুরুটা প্রায় এক যুগ আগে। ২০১২ সালে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগে ভর্তির পরই রকেট তৈরির নেশা ঘুরতে থাকে নাহিয়ান আল রহমান অলির। পাঁচ বছর একাই হাঁটেন স্বপ্ন পূরণের পথে। এরপর ২০১৮ সালে সমমনা কিছু তরুণ যুক্ত হয় তার দলে। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২০২২ সালে টানা চার বছরের পরিশ্রমে তৈরি হয় কাঙিক্ষত রকেট। একে একে তৈরি করেন চারটি রকেট। যদিও অনুমতি না মেলায় সেগুলো আর উৎক্ষেপণের সুযোগ হয়নি। তবে এবার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে নাহিয়ানের।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে প্রথমবারের মতো উৎক্ষেপণ হতে যাচ্ছে নাহিয়ান ও তার দল ‘ধূমকেতুএক্স’ এর তৈরি রকেট ‘একুশে-১’। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এটুআই’র সহযোগিতায় ও অর্থায়নে রকেটটি তৈরি করেছেন তারা। সরকারিভাবে উৎক্ষেপণ হতে যাওয়া এই রকেটটি বায়ুমণ্ডল থেকে আবহাওয়ার বার্তা দেবে বলে জানিয়েছে এর উদ্ভাবক দল।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর টাউনহল চত্বরে রকেটটি উন্মোচনের জন্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে তারা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু এটি উন্মোচন করেন। এ সময় টিম ধূমকেতুএক্স এর সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী, মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানো উপকরণ ও শক্তি প্রযুক্তি বিভাগের গবেষকদের প্রধান প্রফেসর সাইদুর রহমান, নাসা অ্যাপস চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরিফুল হাসান অপু, এটুআই কর্মকর্তা জ্যোতির্ময় সিনহা, মোহাম্মদ শাহ জালাল, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমান ও ধূমকেতুএক্স’র উপদেষ্টা এমএ ওয়ারেছ বাবু।
জানা গেছে, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এটুআই প্রজেক্ট আয়োজিত রকেটটি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে প্রজেক্ট ক্যাটাগরিতে চলতি বছর চ্যাম্পিয়ন হয় টিম ধূমকেতুএক্স। যার ফলশ্রুতিতে ধূমকেতুএক্সকে রকেট তৈরিতে সহায়তায় ৫০ লাখ টাকার একটি প্রজেক্ট দেয় এটুআই। যার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে রকেট একুশে। নাহিয়ানের সঙ্গে রকেট একুশে তৈরিতে ২৪ জন কাজ করেছেন। দলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।
টিম ধূমকেতুএক্সের প্রধান নাহিয়ান আল রহমান অলি জানান, রকেট একুশে তাদের পঞ্চম অর্জন। রকেট একুশের ওজন ৪৫ কেজি, লম্বায় ১২ ফিট, ব্যস সাড়ে ৬ ইঞ্চি। এটিকে সাউন্ডিং রকেটও বলা হয়। সাউন্ডিং রকেট হল এক বা দুই পর্যায়ের কঠিন প্রপেলান্ট রকেট যা উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় অঞ্চল অনুসন্ধান এবং মহাকাশ গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়। রকেট একুশের মাধ্যমে মূলত আবহাওয়ার বার্তা পাওয়া যাবে। এটি বায়ুমন্ডলের ৪৫ কিলোমিটার উড্ডয়ন করে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
নাহিয়ান জানিয়েছেন, তার তৈরি রকেটগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে তৈরি প্রথম ওয়েদার রিসার্চ রকেট (সাউন্ডিং রকেট)। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত পত্রিকা ধূমকেতুর সঙ্গে মিলিয়ে রকেটগুলোর নাম রাখা হয়েছে ধূমকেতু। একুশের আগে তারা ধূমকেতু-০.১, ধূমকেতু-০.২, ধূমকেতু-০.৩ এবং ধূমকেতু-০.৪ নামে চারটি রকেট তৈরি করেছেন। ধূমকেতু-০.১ ও ধূমকেতু-০.২ লম্বায় ৭ ফুট, আয়তনে ৩ দশমিক ৫ ইঞ্চি। অন্যদিকে ধূমকেতু-০.৩ ও ধূমকেতু-০৪-এর উচ্চতা ও আয়তন যথাক্রমে ১০ ফুট ও ১২ ফুট এবং আয়তন ৪ দশমিক ৫ ও ৬ ইঞ্চি। আকাশে উড্ডয়ন করার পর আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণার কাজে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে এসব রকেট।
নাহিয়ান আল রহমান অলি বলেন, বাংলাদেশে রকেট উৎক্ষেপণের নীতিমালা না থাকায় রকেট তৈরির পর জটিলতায় পড়তে হয়। এখন সরকারিভাবে রকেট উৎক্ষেপণের অনুমতি মিলেছে। একুশের পরের ধাপ বায়ান্ন ও তারপরে একাত্তর রকেট তৈরি করা হবে। রকেট একুশে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। একটি রকেট তৈরি করতে ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যায়। একই সময়ে শুরু করা রকেট বায়ান্নর কাজও চলছে। আগামী মার্চে সেটির কাজও শেষ হতে পারে।
তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে সরকারিভাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে রকেট একুশে উড্ডয়ন করা হবে। রকেটটি ইনস্ট্যান্ট ডাটা কমিউনিকেশনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে প্যারাসুটের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। ওই সময় সার্ভারে আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হবে।
নাসা অ্যাপস চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরিফুল হাসান অপু বলেন, যে রকেট উন্মোচন হল সেটি দেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। রকেট টেকনোলজিতে দেশ দ্রুত এসে গেছে। শিক্ষার্থীদের আবিষ্কারের অগ্রগতির কারণে বিজ্ঞানের সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহের বীজ বপন হবে। সবার মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি ও অনুপ্রেরণা তৈরি হবে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, শিক্ষার্থীরা রকেট তৈরি করে দেশের জন্য যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে তা আগামী প্রজন্মকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। নাহিয়ান ও তার দলের উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে আমরা ময়মনসিংহকেও ভিন্নভাবে উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছি। আমরা আশা করি ভবিষ্যতেও অন্যান্য তরুণরা এ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তাদের উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে আমাদের ময়মনসিংহ তথা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।