সর্বশেষ সংবাদ
শেরপুর সংবাদদাতা : শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি টিলা আর টিলা ঘেঁষা পতিত জমিতে অনেকেই এখন মাল্টা চাষ করছেন। মাল্টা চাষ খুব লাভজনক হওয়ায় ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে মাল্টা চাষ।
গারো পাহাড় অঞ্চলের মাটি উর্বর, মধ্যম থেকে দোঁআশ এবং এখানকার আবহাওয়া শুষ্ক ও উষ্ণ হওয়ায় সাইট্রাস (লেবু) জাতীয় ফল চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আর এ জাতীয় ফল বিশেষ করে লেবু ও মাল্টা চাষ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অর্থ আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব।
সরেজমিনে দেখা গেছে যায়, পাহাড়ি টিলা ও টিলা ঘেঁষা পতিত জমিতে সাড়ি সাড়ি মাল্টা গাছ। সেসব গাছে থোকা থোকা গাঢ় সবুজ রঙের মাল্টা ঝুলছে। বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ হচ্ছে শেরপুর এলাকায়। এ মাল্টার রঙ সবুজ হলেও স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি।
তবে চাষিরা জানান, কেমিক্যাল দিলে বাজারে থাকা বিদেশি মাল্টার মতো রঙ আনা যায়। কিন্তু তারা সেটা না করে সবুজ রঙের মাল্টাই সাধারণ মানুষের মন আকৃষ্ট করাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে পরিপূর্ণ মাল্টার রঙ কিছুটা হালকা কাঁচা হলুদের রঙ আসে। এসব মাল্টা শেরপুর জেলাসহ ঢাকায় বেশ চাহিদাও রয়েছে।
শেরপুরের খোলা বাজারে প্রতি কেজি মাল্টা ১৫০-১৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
ঝিনাইগাতি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় লেবু ও মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন উদ্যোক্তা আব্দুল বাতেন।
বাতেন জানান, সীমান্তে হাতির উপদ্রব থাকায় তার প্রায় ৭ একর জমি পতিত পড়ে থাকতো। ২০১৫ সালে কৃষি বিভাগের লোকজনের পরামর্শে দুই একর জমিতে সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ব্লক প্রদর্শনীর মাধ্যমে ও তার নিজ উদ্যোগে আরও আড়াই একর জমিতে লেবু জাতীয় ফলের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানে ১৩০০ সিডলেস ও ৫০০ কাগজি লেবু, ৩০০ মাল্টা, ২০টি কমলা, ২০টি জাম্বুরা ও ৬০টি আম গাছ রয়েছে। বাগান দেখাশোনা করার জন্য বছর চুক্তিতে ৩ জন শ্রমিক রয়েছে। এছাড়া দৈনিক মুজুরি ভিত্তিতে ৫ জন শ্রমিক কাজ করেন।
আব্দুল বাতেনের ফল বাগানে খরচ হয়েছে প্রায় ১৭-১৮ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত তিনি শুধু লেবু বিক্রি করেছেন ১৮ লাখ টাকার। ২০১৮ সালে তিনি মাল্টা বিক্রি করেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকার এবং গত বছর বিক্রি হয় ৩ লাখ টাকার। এবছর টার্গেট আরও অনেক বেশি।
আব্দুল বাতেন ছাড়াও আশপাশের অনেকেই ঝুঁকছেন মাল্টা চাষে। ২০১২ সালে নালিতাবাড়ি উপজেলার বুরুঙ্গা এলাকার পাহাড়ি টিলার ওপর মিশ্র ফল বাগান করেন গাজীপুর থেকে আসা উদ্যোক্তা শওকত আলম। তিনিও এ ফল বাগান থেকে বেশ লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। এছাড়া উপজেলার পাহাড়ি টিলা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে অনেকেই নিজস্ব জমিতে ৫০-১০০টি মাল্টার চারা রোপণ করে মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
শওকত আলম বলেন, ২০১২ সালে তিনি গারো পাহাড়ে বেড়াতে আসেন। এসে দেখেন এখানে মালটা চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিনি এ এলাকায় সাড়ে ৬ একর জমি কিনে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারা সংগ্রহ করে ৩ একর জমিতে ২ হাজার মাল্টা চারা রোপণ করেন। এখন তিনি পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে মাল্টা বিক্রি করছেন। তার মিশ্র ফল বাগানের বাকি সাড়ে ৩ একর জমিতে আম, লেবু, পেয়ারা, কলা, সুপারিসহ ঔষধী গাছ লাগিয়েছেন। মিশ্র ফল বাগানটি করতে তার এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, এ এলাকার আবহাওয়া ও জলবায়ু সাইট্রাস লেবু জাতীয় চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মুহিত কুমার সাহা বলেন, জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার ঝিনাইগাতি, নালিতাবাড়ি ও শ্রীবরর্দীসহ সদর উপজেলাতে মোট ২৪ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হচ্ছে। এসব মাল্টা বিদেশি ও দেশে উৎপাদিত অন্যান্য জেলার মাল্টার চেয়ে অনেক গুণ বেশি সুস্বাদু। আশা করা হচ্ছে, জেলায় আগামীতে মাল্টার আবাদ আরও বাড়বে।