সর্বশেষ সংবাদ
গণতন্ত্র চাইলে এবং ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য সহিংসতার পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে আসার জন্য বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, সহিংসতার পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে আসুন। যদি গণতন্ত্র চান, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিকল্প নেই। ক্ষমতা পরিবর্তনে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, চারটি মূল বিষয়কে বাইরে রেখে বিএনপির যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়, তাহলে সংলাপ হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ আগ বাড়িয়ে সংলাপের কথা বলবে না বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। গতকাল রোববার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান কি থাকবে জানতে চাইলে ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা গায়ে পরে কারো সঙ্গে লাগতে যাবো না, আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। এখন তারা আমাদের উপর হামলা করলে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবো। সবাই সতর্ক অবস্থানে থাকবো। এই পরিস্থিতিতে সরকার বিরোধীদের সংঙ্গে কোন সংলাপে আসবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে, আর তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন নেই। আমরা আগবাড়িয়ে সংলাপের দিকে কোন কথা বলবো না। তবে চারটি মূূল বিষয়কে বাইরে রেখে বিএনপির যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়, তাহলে সংলাপ হতে পারে বলে ওবায়দুল কাদের জানান। তিনি যে চারটি মূল বিষয়ের কথা বলেছেন সেগুলো হলো- তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরবে না, শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, সংসদ আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থায় থাকবে এবং নির্বাচন কমিশন যেমন আছে তেমনই থাকবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। তিনি আরো জানান, নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপি থেকে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করারও সুযোগ নেই। কারণ, সেখানে শুধুমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই অংশ নিতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যদি কেউ মনে করে সহিংসতা করে অপকর্ম করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করবেন, সেটা আপনাদের করতে দেয়া হবে না।
দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য বিএনপি জামায়াত তাদের চিরাচরিত রুপে নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, তাদের তথা কথিত সমাবেশের নামে জনমনে যে আতঙ্ক ছিলো, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে তা আজ সত্য হিসেবে প্রমানিত হয়েছে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় বলে এ ধরণের বর্বরোচিত কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল নৃশংস হামলা চালিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে, পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। এগুলো ছিলো তারক রহমানের ট্যাগ ব্যাক।
বিএনপির সমালোচনা করে কাদের বলেন, বিএনপি ঐতিহ্যগতভাবেই একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। কানাডার ফেডারেল আদালতে এই পর্যন্ত ৬ বার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিএনপিকে রায় দিয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ভন্ডুল করতে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দৃষ্টতা দেখিয়েছে, চেলেঞ্জ করেছে। গণমাধ্যমকে রুদ্ধ করার অপচেষ্টা চালানোর মধ্য দিয়ে সমগ্র রাষ্ট্রকে জিম্মি করে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আমরা বারবারই বলেছি, বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলে, আসলে তারা তাদের রাজনীতির সন্ত্রাসী ধারা, সেই ধারা বাস্তবায়নের জন্য গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তাদের ভয়ঙ্কর রাজনীতির পুরানো চেহারা ফিরে আসার সময় নিচ্ছিলো, সময়মত তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ বেছে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মানে তাকে অবজ্ঞা ও অপমান করা। সমগ্র জাতিকে জিম্মি করে যে কোন উপায়ে ক্ষমতা দখল তাদের উদ্দেশ্য।
শনিবারের বিএনপির সমাবেশে ঘটা সহিংসতাকে ক্যাপিটাল হিলের সঙ্গে তুলনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকালে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল হিল দখলের আগ্রাসীকে তুলনা করা যায়। আন্দোলনের নামে তারা সবই করেছে, সব পাপ কর্মের প্রদর্শন তারা করেছে। ৩০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছে, গতকালে ঘটনা দেখে শুনে সত্যটা তারা লিখতে গিয়ে তারাও রোশানলে পড়েছে। একজন পুলিককে হত্যা করে লাশের উপর আবারও হামলা করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবন, জাজেজ কমপ্লেক্সে হামলা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার মত নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। হাসপাতালে প্রবেশ করে রোগীদের উপর হামলা গাজায় ইসরায়েলীদের হামলার ঘটনা মনে করিয়ে দেয়।
পুলিশ হত্যাকে পরিকল্পিত দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকালকে পুলিশকে হত্যা করা তাদের ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত খুনের ঘটনা। বিএনপির সন্ত্রাসীরা পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বিএনপি সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, অন্ধকারের পথ বেছে নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাহজাহান খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।